দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (2025)

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (1)

Article information
  • Author, সাইয়েদা আক্তার
  • Role, বিবিসি নিউজ বাংলা

রোববার ২৯শে সেপ্টেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র এবং তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৭ই অগাস্ট মি. রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ মোট পাঁচজনকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট।

মি. রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিবিসিকে বলেছেন, যেহেতু তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সে কারণে আদালত তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এখন তার পক্ষে আপিল ফাইল করার পর এই পরোয়ানা স্থগিত হবে।

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী মি. মেজবাহ জানিয়েছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলাটি ২০১৫ সালে দায়ের করা হয়েছিল।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনও সময় থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস, বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।

আরো পড়তে পারেন
  • ‘এজেন্সির ফোন’ ও বিতর্কিত আইন, সংবাদ প্রচারে নানামুখী চাপ বাংলাদেশে

  • সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের এতো অবনতির কারণ কী

  • গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন? সাংবাদিক ও পাঠকের চোখে

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (2)

এই অভিযোগে ২০১৫ সালের তেসরা অগাস্ট ডিবি পুলিশের একজন পরিদর্শক বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন।

এরপর ২০১৮ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

এই মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানও গ্রেফতার হয়েছিলেন।

মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, মামলা এবং কারাদণ্ড

বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাহমুদুর রহমানকে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এরপর ২০০৫ সালে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

তিন বছর পর ২০০৮ সালে তিনি বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলীর মালিকানাধীন আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন।

সে সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে মি. রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী মি. মেজবাহ জানিয়েছেন, মি. রহমানের বিরুদ্ধে মামলার মোট সংখ্যা ১৩০টির মত, এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক হয়েছে মানহানির মামলা।

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, Getty Images

এছাড়া বিচারপতির কথোপকথন পত্রিকায় ফাঁস, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণা, বিস্ফোরকদ্রব্য, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নানা ধরণের মামলা রয়েছে।

মি. রহমানের আইনজীবীর দাবি, এসব মামলার বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

মাহমুদুর রহমান প্রথম আটক হয়েছিলেন ২০১০ সালের জুন মাসে।

আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীর করা একটি প্রতারণা মামলায় তাকে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশনার অনুমতি বা ডিক্লারেশনও বাতিল করে দেয়া হয়।

সেসময় ঢাকার জেলা প্রশাসকের আদেশে পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করার পর পুলিশ আমার দেশের ছাপাখানাও বন্ধ করে দেয়।

ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুহিবুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “আইন অনুযায়ী একজন প্রকাশক ছাড়া কোনও পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে না এবং দৈনিক আমার দেশ বর্তমানে (ওই সময়ে) কোনও বৈধ প্রকাশক ছাড়াই প্রকাশিত হচ্ছিলো। কাগজটির বৈধ কোনও সম্পাদক না থাকায় ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন ১৯৭৩ অনুসারে এর ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে।”

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
  • হাসান নাসারুল্লাহর মৃত্যুর পর হেজবুল্লাহ, ইসরায়েল এবং ইরান কী করবে?

  • '‘ক্রসফায়ারের’ মামলায় ফাঁসছেন ম্যাজিস্ট্রেটও'

  • জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কী অর্জন করলেন?

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (4)

পরে, আদালত অবমাননার একটি মামলায় সে বছর ১৯শে অগাস্ট মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সেসময় সব মিলিয়ে নয়মাস কারাভোগের পর ছাড়া পান মি. রহমান।

তবে মুক্ত থাকলেও এরপর গ্রেফতার আশংকায় তিনি দীর্ঘদিন আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয়েই অবস্থান করেন।

এরপর ২০১৩ সালে মি. রহমানের বিরুদ্ধে ধর্মকে ঘিরে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। এ দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারক লিপিও দিয়েছিল।

ওই বছরের ১১ই এপ্রিল মি. রহমানকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় থেকেই আটক করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতির কথোপকথন পত্রিকায় ফাঁস করার অভিযোগ ওঠার পর, মি. রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দুইটি মামলা ছিল বলে তাকে আটকের পর জানিয়েছিল পুলিশ।

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (5)

সেসময় বিচারপতির কথোপকথন ফাঁস ছাড়াও হরতালের সময় গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার দুটি মামলাতেও মি. রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে জামিনে মুক্তি পান মাহমুদুর রহমান।

এরপর, সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেয়ায় ২০১৫ সালের অগাস্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে।

পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।

এদিকে, ২০১৬ সালের অগাস্টে জঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর এবং উস্কানিমূলক খবর বা বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পরামর্শে নিউজ পোর্টালসহ ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল।

বন্ধ করে দেয়া ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল, যার মধ্যে আমার দেশ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ছিল অন্যতম।

তবে তারও তিন বছর আগে থেকে অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত আমার দেশ পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ ছিল।

জামিনে মুক্ত হয়ে মি. রহমান ২০১৭ সালে বিদেশে চলে যান।

তার আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রবাসজীবনে প্রথমে মালয়েশিয়া এবং পরে তুরস্কে ছিলেন তিনি।

সবশেষ গত ২৭শে সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান।

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা - BBC News বাংলা (2025)

References

Top Articles
Latest Posts
Recommended Articles
Article information

Author: Fr. Dewey Fisher

Last Updated:

Views: 5469

Rating: 4.1 / 5 (42 voted)

Reviews: 89% of readers found this page helpful

Author information

Name: Fr. Dewey Fisher

Birthday: 1993-03-26

Address: 917 Hyun Views, Rogahnmouth, KY 91013-8827

Phone: +5938540192553

Job: Administration Developer

Hobby: Embroidery, Horseback riding, Juggling, Urban exploration, Skiing, Cycling, Handball

Introduction: My name is Fr. Dewey Fisher, I am a powerful, open, faithful, combative, spotless, faithful, fair person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.